মার্কিন মধ্যর্ব্তী নির্বাচন: কে জিতলেন কে হারলেন, তাতে লাভ কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রথম ভোটগ্রহণ শেষের কয়েক ঘণ্টা পর এখনও গণনা চলছে। ভোট শেষে একটি ভালো রাত গেছে রিপাবলিকান পার্টির। তবে সেটি খুব বেশি খুশি হওয়ার মতো নয়। জয়ের জন্য এখনও কাঙ্ক্ষিত আসন পাওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে রিপাবলিকান শিবির। তারা ইতোমধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের এক আসন পেনসিলভানিয়ায় হেরে গেছে। এখন সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য নেভাদা, অ্যারিজোনা এবং জর্জিয়া— তিনটির অন্তত দুটিতে জয় পেতে হবে রিপাবলিকান পার্টিকে।

মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় পরাজয়ের হিসেব-নিকেশ…

১. প্রতিনিধি পরিষদ জয়ের পথে রিপাবলিকান

ডেমোক্র্যাটসদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া গেলেও মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে রিপাবলিকান পার্টি। জয় প্রায় নিশ্চিত হওয়ায় এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা কত বেশি হবে?

২০২০ সালের নির্বাচনে চমকে যাওয়ার মতো শক্তিশালী পারফরম্যান্সের সুবাদে রিপাবলিকানরা এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া থেকে মাত্র অল্প কয়েকটি আসন পিছিয়ে রয়েছে। রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে কিছু নতুন নতুন কংগ্রেসশনাল জেলায় পার্টির নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের মাধ্যমে এবারের এই নির্বাচন শুরু করেছে।

যেকোনও মাত্রার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই রিপাবলিকানরা আইনসভায় ডেমোক্র্যাট শিবিরের এজেন্ডা পাসের দরজা বন্ধ করে দিতে পারবে। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের ভেতরে তদন্তও চালাতে পারবেন তারা। আর যেকোনও বিচারে এটাই হবে তাদের জন্য বড় বিজয়।

২. ফ্লোরিডায় রিপাবলিকান দলীয় রন ডিস্যান্টিস পুনরায় নির্বাচিত

চার বছর আগে ডেমোক্র্যাট দলীয় অ্যান্ড্রু গিলামকে হারিয়ে ফ্লোরিডার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন রিপাবলিকান দলীয় রন ডিস্যান্টিস। তার চার বছরের রক্ষণশীল নেতৃত্বের পর তিনি আবারও এই রাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। স্বস্তিদায়ক জয় পেলেও রন ডিস্যান্টিসকে আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য অন্যতম হুমকি মনে করেন রিপাবলিকান দলীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কারণ রন ডিস্যান্টিস ওই নির্বাচনে রিপাবলিকান শিবিরের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন দৌড়ে অংশ নিতে পারেন। আর এই আশঙ্কা থেকে ট্রাম্প দুদিন আগেও এক সমাবেশে রনের সমালোচনা করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অংশ না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে রন ডিস্যান্টিসের।

কীভাবে এই বিশেষ উল্লেখযোগ্য জয় পেতে যাচ্ছেন তিনি? ২০১৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিয়ামি-ডেইড কাউন্টিতে প্রায় ২০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। কিন্তু এবছর ২০০২ সালের জেব বুশের পর হিস্পানিক এলাকায় প্রথম রিপাবলিকান গভর্নর প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়ে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন।

৩. ট্রাম্পের জন্য এক মিশ্র রাত

ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যালট পেপারে না থাকলেও সেখানে ছায়ার মতো হাজির আছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট তার মার-অ্যা-লাগোর বাসা থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেছেন। এতে তিনি নিজের পছন্দের প্রার্থীদের জয়ের দাবি করেন।

কিন্তু সত্য আরও বেশি জটিল। ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীদের অনেকেই ইতোমধ্যে হেরে গেছেন। মেহমেত ওজেড পেনসিলভানিয়ায় সিনেটের লড়াইয়ে হেরে গেছেন। হার্শেল ওয়াকার জর্জিয়ায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছেন। অ্যারিজোনায় পিছিয়ে আছেন ব্লেইক মাস্টার্স। কেবল ওহাইও অঙ্গরাজ্যে জেডি ভ্যান্স একমাত্র পরিষ্কার জয় পেয়েছেন।

মঙ্গলবারের রাতের পর রিপাবলিকানরা সাবেক এই প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক প্রবৃত্তি সম্পর্কে আরেকবার ভাবতে শুরু করেছেন। এখন তিনি আগামী সপ্তাহে ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার ঘোষণা দিতে পারেন।

৪. ডেমোক্র্যাট দলীয় তারকাদের হতাশা

২০১৮ সালে টেক্সাসে বেটো ও’রৌরকে, জর্জিয়ায় স্ট্যাসি আব্রামস নির্বাচনী দৌড়ে হেরে যান। কিন্তু সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়ে তারা ডেমোক্র্যাটদের হৃদয় জয় করেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর তহবিলে লাখ লাখ ডলার সংগ্রহ এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তোলার দারুণ ক্ষমতার কারণে অনেকেই তাদের দলের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখেন।

সমর্থকরা আশা করেছিলেন তারকা ডেমোক্র্যাটরা এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। ডেমোক্র্যাট দলীয় অনেক তারকা রাজনীতিকদের পাশাপাশি তাদের কর্মী-সমর্থকরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।